ব্যবসা করার নিয়ম
|

ব্যবসা করার নিয়ম সঠিক নিয়ম কানুন জানুন!

বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক সময়ে একটি ব্যবসা দাড় করানো বেশ কষ্টসাধ্য। আর ব্যবসা করার নিয়ম সঠিকভাবে না জানা থাকলে এই প্রক্রিয়াটি অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। আপনি যদি নতুন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, এটি আপনাকে কিছুটা হলেও সহযোগীতা করবে।

ব্যবসা করার জন্য আপনার দক্ষতা যেমন অপরিহার্য, একইভাবে আপনাকে আরো বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে এই বিষয়গুলো আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নীচে ধাঁপে ধাঁপে এগুলোর বর্ণণা দেওয়া হলো।

ব্যবসা করার নিয়ম

আজ যে একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী তার ইতিহাস ঘাটলে হয়তো দেখা যাবে সে অনেকবার অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে এক পর্যায়ে সফলতা পেয়েছে। তবে এটা আমরা কেউই আশা করি না যে বার বার লস করে অভিজ্ঞতা অর্জন করি। তাই সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে নীচের ব্যবসা করার নিয়মগুলো মেনে ব্যবসা শুরু করুন।

মার্কেট রিসার্চ

ব্যবসা শুরু করতে প্রথমেই প্রয়োজন মার্কেট রিসার্চ। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন এই ব্যবসাটি শুরু করা আপনার জন্য উচিত হবে কি না। শুরুতেই মার্কেট রিসার্চ করে কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাকে বের করতে হবে। যেমন-

  1. আপনি যে পন্যের ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তার চাহিদা বাজারে কেমন রয়েছে। 
  2. পন্যের জন্য বাজারের আকার কেমন, অর্থাৎ কি পরিমাণ বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  3. আয়ের সম্ভাবনা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ কেমন রয়েছে।
  4. আপনার পন্যের গ্রাহক কারা এবং আপনার তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে আপনি পন্য সরবরাহ করতে পারলে ব্যবসা কোথায় পৌছাতে পারে।
  5. সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অনুরূপ বিকল্প কি পরিমাণ রয়েছে এবং সেগুলোর জনপ্রিয়তা কেমন।
  6. সম্ভাব্য ক্রেতারা এই পন্যের জন্য কেমন অর্থ খরচ করে।

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুবই জরুরী এবং এর মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন আপনার এই ব্যবসাটি শুরু করা কতখানি যুক্তিসঙ্গত হবে।

প্রতিযোগীদের সম্পর্কে গবেষণা

যখন আপনি একটি ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন, আপনার সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা সফলতা অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাদের সম্পর্কে গবেষণা করে নীচের বিষয়গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

  1. তাদের পন্যের মার্কেট শেয়ার কেমন রয়েছে।
  2. প্রতিযোগীদের শক্তি এবং দুর্বল দিক কোনগুলো।
  3. বাজারে প্রবেশ করতে হলে আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ উইন্ডো কোনটি।
  4. প্রতিযোগীদের কাছে আপনার টার্গেট মার্কেটের গুরুত্ব কেমন।
  5. বাজারে প্রবেশ করার সময় বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে এমন সমস্যাগুলো কি কি।
  6. পরোক্ষ বা গৌণ প্রতিযোগীরা সাফল্যকে কতখানি প্রভাবিত করতে পারে।

এই বিষয়গুলো জানা আপনার ব্যবসা পরিচালনাকে অনেক বেশি সহজতর করে তুলবে।

পরিকল্পনা

একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে ভাল পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এমন বিষয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করুন যে বিষয়ে আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলুন। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যের উপর নির্ভর করা কোন অবস্থাতেই ভাল কোন পরিকল্পনা নয়। 

বিভিন্নভাবে বার বার গবেষণার মাধ্যমে পরিকল্পনাটিকে সময় উপযোগী, কার্যকর করে তুলতে চেষ্টা করুন। কি কি ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং সেইগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেই বিষয়ে নোট রাখুন। যদি সুযোগ থাকে তাহলে অভিজ্ঞ লোকজনের সাথে পরামর্শ করার মাধ্যমে আপনার পরিকল্পনাকে যতটা সম্ভব নিঃখুত ও নিশ্ছিদ্র করে তুলুন।

সেরা জায়গা নির্বাচন

যে কোন জায়গাতে যে ব্যবসা ভালো হয় না সেটা আমরা সবাই জানি। আপনি যে ধরণের ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তার জন্য সেরা জায়গা কোনটি হবে সতর্কভাবে তা নির্বাচন করুন। ব্যবসার জন্য জায়গা নির্বাচন কোনভাবেই অবহেলা করার মতো কোন বিষয় না। বরং একটি সুবিধামতো সুন্দর জায়গা নির্বাচন করতে পারলে ব্যবসায় খুব সহজেই সফলতা পাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় নথি বা রেজিস্ট্রেশন

ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী সরকারি বিধি মোতাবেক প্রযোজনীয় লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে একজন ব্যবসায়ীর জন্য ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট সহ আনুসঙ্গিক যে ধরণের আইনগত নথি প্রয়োজন তা সংগ্রহের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

এই সকল নথিতে সাধারণত আপনার ব্যবসা এর নাম, ধরণ, মালিকানা ইত্যাদি উল্লেখিত থাকে। অতিরিক্ত আইনি সুরক্ষার জন্য আপনার ব্র্যান্ডটিকে বা ব্যবসার নামকে ট্রেডমার্ক করে নিতে পারেন। বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে জানুন!

ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা

ব্যবসার শুরুতেই আপনার ব্যবসার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন। এই ব্যাংক অ্যকাউন্ট আপনাকে সুরক্ষা, পেশাদারিত্ব সহ স্বচ্ছ আর্থিক রেকর্ড বজায় রাখতে সহায়তা করবে। তবে এই ক্ষেত্রে ব্যাংক বা ব্রাঞ্চের লোকেশন, শাখার সংখ্যা, মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

বিনিয়োগ

আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করার আগে একটি স্টার্টআপে বিনিয়োগ করুন। এটি আপনাকে বুঝতে সহায়তা করবে যে এই ব্যবসায় লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ কেমন হতে পারে। স্টার্টআপের সুবিধা হলো আপনি যদি বুঝতে পারেন যে এই ব্যবসায় ভাল করার সুযোগ কম, তাহলে অল্প পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে পারবেন। আর যদি দেখেন এখানে সুযোগ রয়েছে ভালো করার, তাহলে সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করুন।

মার্কেটিং

প্রচারেই প্রসার কথাটা সব সময়ের জন্যই সত্য। ব্যবসাতে ভালো করতে হলে আপনাকে অবশ্যই মার্কেটিং এর উপর খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে পোস্টার, বিলবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী অন্যান্য বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা গ্রহণ কর যেতে পারে। অনলাইন মার্কেটিং এখনকার সময়ে খুবই কার্যকর, এইভাবেও চেষ্টা করতে হবে।

বীমা

একটি বীমা নীতি আপনার ব্যবসাকে অনেক বেশি নিরাপদ করে তুলতে পারে। তাই ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই কার্যকর বীমা নীতি গ্রহণ করুন। ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে জেনে নিন!

শেষ কথা

আমরা এখানে ধাঁপে ধাঁপে যে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বর্ণণা দিয়েছি তা একটি ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য খুবই উপযুক্ত হতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রে একই নিয়োম সমানভাবে কার্যকর হয় না। যদি এই লেখার কোন একটি বিষয়ে আপনার আরো বিস্তারিত জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *